চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার উত্তরে ১৪০০ একরের বিশাল রামগড় চা বাগান। এই চা বাগানের জন্য জমি লিজ নিয়ে বেআইনিভাবে গড়ে তোলা হয়েছে আলাদা মৎস্য প্রকল্প। এ জন্য জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা হয়েছে। আর এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড আড়াল করতে সাংবাদিকদের ভেতরে প্রবেশের ক্ষেত্রে রয়েছে অনেক কড়াকড়ি।চা বোর্ডের সচিব সুমনী আক্তারের মতে, চা বাগানের জন্য জমি লিজ নিয়ে অন্য কাজে ব্যবহারের সুযোগ নেই। অন্য কাজে ব্যবহার করতে চাইলে অনুমতি নিতে হবে। ফটিকছড়ির রামগড় চা বাগানে বিনা অনুমতিতে অবৈধভাবে মৎস্য প্রকল্প করা হলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবো।
আরো জানা যায়, প্রায় ৫০ একর জমি খনন করে এই কৃত্রিম হ্রদে মৎস্য প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। শ্রমিকদের ভোগদখলীয় জমি থেকে তাদেরকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে সেখানে নিয়মবহির্ভূতভাবে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে মৎস্য প্রকল্প এবং নানা প্রজাতির নারকেল ও সুপারি গাছের বাগান করা হয়েছে, যা চা বাগানের সম্পূর্ণ নীতিমালা বহির্ভূত। বাংলাদেশ চা বোর্ড ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের ইজারা নির্দেশনায় চা বাগানের বরাদ্দকৃত ভূমিতে চা চাষ ব্যতীত অন্য কোনো ফসল আবাদ বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। তবে অনাবাদি জমিতে জেলা প্রশাসক ও চা বোর্ডের সুপারিশ সাপেক্ষে ভূমি মন্ত্রণলয়ের অনুমোদনক্রমে কৃষিশিল্প গড়ে তোলা যাবে। এমনকি বলা আছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ব্যতীত কোনোভাবেই চা বাগানের জন্য বরাদ্দকৃত ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। অভিযোগ রয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই এ বৃহৎ প্রকল্প গড়ে উঠেছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ কামাল বলেন, চা বাগানেরর জন্য জমি লিজ নিয়ে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না, এ ক্ষেত্রে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করাও যাবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, চা বাগানে অবৈধভাবে মাছের প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। এটির কোনো অনুমোদন নেই। চট্টগ্রামে অবস্থিত একটি ফিশারিজ কোম্পানির ক্যাশমেমো ব্যবহার করে এ প্রকল্প থেকে মাছ বিক্রি করা হয়।
ফটিকছড়ির বাগান বাজার এলাকার এক মাছ ব্যবসায়ী জানান, চা বাগানের মৎস্য প্রকল্প থেকে ছোট মাছ বিক্রির চুক্তি তাকে দেয়া হয়েছে। হ্রদ থেকে মাছ ধরে তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি দামে সেগুলো বিক্রি করেন। আর বড় মাছগুলো কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামে তাদের নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে পাঠিয়ে দেন।
রামগড় চা বাগানের ব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীন রামগড় চা বাগানে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে মৎস্য প্রকল্পের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইরিগেশন প্রকল্প করা হয়েছে। এখানে কিছু মাছ চাষ হতে পারে। তবে এ সব কিছুর অনুমোদন আছে আমাদের।
শিল্পপতি নাদের খানের বিরুদ্ধে মামলারামগড় চা বাগানের ভেতর মাটি কেটে অবৈধভাবে কৃত্রিম হ্রদ তৈরির অভিযোগে শিল্পপতি নাদের খানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি পেড্রোলো গ্রুপ ও ফটিকছড়ির ‘রামগড় চা বাগান’ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। গত মঙ্গলবার রাতে ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আবু বক্কর বাদি হয়ে স্থানীয় ভুজপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।