জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে চলমান একটি বিক্ষোভ সেনাবাহিনী দমন করার চেষ্টার সময় কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় শহর গোমায় কমপক্ষে ৪৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এই হতাহতের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছে জাতিসঙ্ঘের কর্মকর্তারা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কঙ্গোর একজন পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর কঙ্গোয় জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী মিশন এবং অন্যান্য বিদেশী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। যদিও ওই ভিডিও যাচাই করে দেখতে পারেনি রয়টার্স।
এরপর কঙ্গোর সেনাবাহিনী জোর করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে সহিংসতা শুরু হয়। বুধবার এই ঘটনা ঘটে।
সরকারি একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় কমপক্ষে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে আর কমপক্ষে ৫৬ জন আহত হয়েছে। সহিংসতার ঘটনায় ১৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সেনাবাহিনী।
জেনিভায় একটি সংবাদ সম্মেলনে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘পুলিশের একজন কর্মকর্তাসহ ৪৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনা আরো ৫৬ জন আহত হওয়ার খবরে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি।’
তিনি আভাস দেন, হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে তারা খবর পাচ্ছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স আরো জানিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ট্রাকের ভেতরে লাশ জমা করে রাখছে সেনা সদস্যরা। পরে কনভয় বা সেনাবাহিনীর গাড়ি বহরের সাথে সেই ট্রাক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যদিও এই ভিডিও সত্যতা যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের গোমা শাখার প্রধান অ্যানে-সিলভি লিন্ডার বলেন, বিক্ষোভের ঘটনার পর থেকে তার ক্লিনিকে ছুরিকাঘাত এবং গুলির ক্ষত নিয়ে অসংখ্য মানুষ চিকিৎসা নিতে এসেছে।
মনুসকো নামে পরিচিত কঙ্গোয় নিয়োজিত জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী একটি বিবৃতিতে তাদের শোক প্রকাশ করেছে। সহিংসতার ঘটনায় তারা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলেও জানিয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘কঙ্গোর কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করে। যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের সাথে মানবিক ব্যবহার এবং তাদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর জন্যও অনুরোধ করছি।’
দশকের পর দশক ধরে চলা মিলিশিয়া বাহিনীর সহিংসতা থেকে বেসামরিক মানুষজনকে নিরাপত্তা জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষীরা ব্যর্থ হয়েছে, এমন অভিযোগে গত বছর থেকে তাদের বিরুদ্ধে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়।
গত বছরের জুলাই মাসের ওই বিক্ষোভে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল যাদের মধ্যে তিনজন শান্তিরক্ষীও নিহত হয়েছিলেন। সেই সময় গোমা এবং বুতেমবো শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল।
গত জুলাই মাসেই মালির সরকারের দাবিতে ওই দেশ থেকে শান্তিরক্ষা মিশন বন্ধ করে দেয় জাতিসঙ্ঘ।
কঙ্গোয় শান্তিরক্ষা মিশন নিয়ে কিছু তথ্য
কঙ্গোয় জাতিসঙ্ঘের এই মিশনের নাম ইউনাইটেড ন্যাশন্স অর্গানাইজেশন স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন দ্যা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব দি কঙ্গো বা মনুসকো।
গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটিতে প্রথম এই শান্তিরক্ষা মিশনের যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালের পহেলা জুলাই থেকে। তাদের মূল দায়িত্ব বেসামরিক নাগরিকের সুরক্ষা দেয়া, মানবাধিকার কর্মীদের যেকোনো সহিংসতা থেকে রক্ষা করা এবং শান্তি রক্ষায় কঙ্গোর সরকারকে সহায়তা করা।
জাতিসঙ্ঘের তথ্য অনুযাী, গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এই শান্তিরক্ষা মিশনে মোট ১৭ হাজার ৭৫৩ জন সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে সৈন্য রয়েছে ১২ হাজার ৩৭৯ জন আর পুলিশ রয়েছে এক হাজার ৫৯৭ জন। তাদের বাকিদের মধ্যে আছে মিশনের নানা বিষয়ের বিশেষজ্ঞ, সামরিক পর্যবেক্ষক, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং বেসামরিক সদস্যরা।
সৈন্যবাহিনীতে তৃতীয় সর্বোচ্চ সৈনিক রয়েছে বাংলাদেশের, এক হাজার ৬৪০ হন। তবে সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভারতও পাকিস্তান, যথাক্রমে এক হাজার ৮৩৪ জন আর এক হাজার ৭৬৭ জন।
পুলিশের সংখ্যার দিক থেকেও সেনেগাল আর মিশরের পরেই রয়েছে বাংলাদেশের পুলিশের অবস্থান। কঙ্গোয় গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের ২১১ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলেন।
সূত্র : বিবিসি
