যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২০ নির্বাচনের সময় জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে ফেলার চেষ্টার এক অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে আনা ১৩টি আনুষ্ঠানিক অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ভয়ভীতি দেখানোর বিরুদ্ধে জর্জিয়ার গুণ্ডামি-বিরোধী র্যাকেটিয়ারিং আইন লঙ্ঘন করা, সরকারি কর্মকর্তার শপথ লঙ্ঘন এবং জালিয়াতির ষড়যন্ত্র।
হোয়াইট হাউজের সাবেক স্টাফ প্রধান মার্ক মেডোস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি এবং মার্কিন বিচার বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা জেফরি ক্লার্কসহ আরো ১৮ জনের বিরুদ্ধে একই রকম অভিযোগ আনা হয়েছে।
ওই নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিজয় নস্যাৎ করার প্রচেষ্টা অভিযোগে ট্রাম্প ইতোমধ্যেই ফেডারেল আইনে অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন।
সর্বশেষ জর্জিয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট কোনো অন্যায় করার কথা অস্বীকার করেছেন।
তিনি দাবি করেছেন, আসন্ন নির্বাচনে তার বিজয় ঠেকানোর উদ্দেশেই তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। তার পক্ষে প্রচারণায় বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এখন ‘একটি মার্কসবাদী তৃতীয় বিশ্বের একনায়কত্বে’ পরিণত হয়েছে।
অভিযোগে কী বলা হয়েছে?
জর্জিয়ার দুর্নীতি ও সংঘবদ্ধ অপরাধ-বিরোধী আইন র্যাকেটিয়ারিং ইনফ্লুয়েন্সড অ্যান্ড করাপ্ট অর্গানাইজেশনস (রিকো) অ্যাক্টের অধীনে ১৮ জনের বিরুদ্ধে মোট ৪১ দফা অভিযোগ আনা হয়েছে।
একটি ফোন কলের রেকর্ডিং ফাঁস হওয়ার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রাজ্য পর্যায়ে তদন্ত শুরু হয়। ওই ফোন কলে ট্রাম্প জর্জিয়ার শীর্ষ নির্বাচনী কর্মকর্তাকে ‘১১ হাজার ৭৮০টি ভোট খুঁজে বের করতে’ বলেছিলেন।
এই মামলার প্রধান সরকারি কৌঁসুলি জর্জিয়ার ফুলটন কাউন্টির অ্যাটর্নি জেনারেল ফ্যানি উইলিস জানিয়েছেন, ১৯ জন আসামিকে একসাথে অভিযুক্ত করা হচ্ছে এবং তাদের আত্মসমর্পণের জন্য ২৫ অগাস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।
মিজ উইলিস বলেন, ট্রাম্পের কথিত সহযোগীরা ‘প্রেসিডেন্ট পদে আরেকটি মেয়াদ কুক্ষিগত করার’ এক ‘অবৈধ প্রচেষ্টায়’ অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৭০ সালে পাস হওয়া কঠোর রিকো আইনটি প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মাফিয়া গুণ্ডা চক্রের অপরাধ মোকাবেলার লক্ষে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পরে বছরের পর বছর ধরে উচ্চ-পর্যায়ের অপরাধ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতিসহ অন্য অপরাধের বিচার করতে আইনটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অন্য অভিযোগের মধ্যে রয়েছে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে তার শপথ লঙ্ঘনের জন্য অনুরোধ করা, একজন সরকারি কর্মকর্তার ছদ্ম-পরিচয় ব্যবহারের ষড়যন্ত্র করা, জালিয়াতির ষড়যন্ত্র করা, মিথ্যা বিবৃতি দেয়ার ষড়যন্ত্র করা, মিথ্যা দলিল তৈরি এবং জমা দেয়ার ষড়যন্ত্র করা।
জর্জিয়ার আইন অনুযায়ী আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সাধারণত আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতে পড়ে শোনানো হয়। সেক্ষেত্রে ট্রাম্পকে সশরীরে আদালতে হাজিরা দিতে হবে কিনা তা এখনো পরিষ্কার নয়।
তাকে আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হবে যে তিনি অভিযোগ স্বীকার করছেন কিনা। তবে তার আইনজীবী আদালতের কাছে এটি মওকুফ করার আবেদন জানাতে পারেন, যাতে উপস্থিত না থেকেই তিনি দোষ অস্বীকার করতে পারেন।
এই মামলায় ট্রাম্পকে জামিন দেয়া হবে কিনা সেই সিদ্ধান্তও নেয়া হবে আদালতে।
বিচারের সময় আদালতে হাজির থাকা এবং অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার শর্তে আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দিতে পারে।
ফুলটন কাউন্টির শেরিফ প্যাট ল্যাবট জানিয়েছেন, পুলিশী হেফাজতে নেয়ার পর আসামি হিসেবে ট্রাম্পের ছবি তোলা হবে।
এরপরো কি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে পারবেন?
এর সংক্ষিপ্ত জবাব হচ্ছে, হ্যাঁ। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার পরও কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।
এর সর্ব-সাম্প্রতিক উদাহরণ হল জর্জ ডব্লিউ বুশ, মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর জন্য যিনি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে একে সামান্য অপরাধ হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু এরপরও তিনি পরপর দুই মেয়াদে হোয়াইট হাউসে দায়িত্ব পালন করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদে কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন তার নিয়মগুলো মার্কিন সংবিধানে রয়েছে এবং এগুলো বেশ সহজ। একজন প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে, তাকে জন্মগত-ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে এবং কমপক্ষে ১৪ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে।
তবে এসব নতুন অভিযোগের কারণে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
সূত্র : বিবিসি