জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীতে বড় ধরনের জনসমাগম ঘটাতে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র জনগণের কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা ও সরকারের জনপ্রিয়তার বিশেষ বার্তা দিতে চায় দলটি। তারই অংশ হিসেবে আজ ১ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে ছাত্রলীগের সমাবেশ। আগামীকাল ২ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে সুধী সমাবেশ। দুই সমাবেশেই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর দু’টি সমাবেশেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ করার জোরালো পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীনদের।
সমাবেশের মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে এ প্রসঙ্গে গতকাল বিকেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আজকে দেশের বৈধ সরকারকে হটাতে ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির যে চক্রান্ত চলছে ছাত্রলীগের সমাবেশ থেকে তার প্রতিবাদ করা হবে। তিনি বলেন, নৌকার অভিযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে তরুণ প্রজন্ম। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। এই সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এই সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান প্রেক্ষাপটে তরুণদের দিকনির্দেশনা দেবেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, ছাত্রলীগের একটি গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে এ দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই সমাবেশের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে জানতে পারবে, সংগঠনের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত হতে পারবে। তা ছাড়া জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত যে ষড়যন্ত্র করছে তা মোকাবেলা করার জন্য তরুণ প্রজন্ম উজ্জীবিত হয়ে এগিয়ে আসবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২ সেপ্টেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন হবে। এ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হবে সুধী সমাবেশ। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে এবং দেশের উন্নয়নে সরকার যে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে তা ঢাকাবাসী জানতে পারবে, জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে। সেই উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে এই সমাবেশের মাধ্যমে ঢাকাবাসীসহ দেশবাসীর কাছে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হবে। আমরা আশা করি, আগামীতেও দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসী নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারো বিজয়ী করবেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ, মেগা প্রকল্প স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু ও মেট্রোরেল চালু হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন হবে। আর ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগিতর এসব চিত্র দেশের মানুষের জানা দরকার। এ ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে যেসব দুর্নীতি হয়েছে সেই দুর্নীতির চিত্রও মানুষের জানা দরকার। এ বিষয়টি সম্পর্কে জনগণ স্পষ্ট ধারণা পেলেই আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণ তাদের সুচিন্তিত রায় প্রদান করতে সহজ হবে।
দলীয় সূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব সমাবেশ ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজধানীতে বড় ধরনের জনসমাগম ঘটাতে চায় আওয়ামী লীগ। ছাত্রলীগের সমাবেশে শিক্ষার্থীদের সমাগম ঘটবে। আর সুধী সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী সব শেণিপেশার মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজধানীজুড়ে এক প্রকার বড় ধরনের শোডাউনও হবে। যেটা বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় কাজ দেবে। সুধী সমাবেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগের সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ থাকবে নজিরবিহীন। ছাত্রলীগের সমাবেশে পুরো সোহরাওয়ার্দীর মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ করার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
আগামী ২ সেপ্টেম্বর জনসভা প্রসঙ্গে আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, আগামী ২ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের জনসভা পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠ ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের নেতাকর্মীরাই কানায় কানায় পূর্ণ করে দিবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফলে যানজট নিরসন হবে, মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারবে। সুতরাং মানুষের কর্ম যদি কথা বলে তাহলে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। তিনি ঢাকা শহর থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছেন তার ফল এ দেশের জনগণ দেবেন।
স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ছাত্র সমাবেশ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ করতে যাচ্ছে বলে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, আজ শুক্রবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই সমাবেশে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীর সমাগম হবে বলে আশা করি। স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশ হবে এটি। এই সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে বার্তা দেবেন। সাদ্দাম হোসেন বলেন, এটি ছাত্রলীগের সমাবেশে সীমাবদ্ধ নেই। এটি বাংলাদেশের পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীর একটি প্রতীকী ছাত্র সমাবেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে এই তরুণদের শক্তির ওপর ভিত্তি করে বঙ্গবন্ধুতনয়া শেখ হাসিনার নিরঙ্কুশ ব্যালট বিপ্লবে বিজয়ী হতে যাচ্ছেন। সন্ত্রাসীদের সাথে ছাত্রসমাজ আপসহীন জায়গায় রয়েছে।