আলতাফ হোসেনঃ রাজধানীতে বায়ুদূষণের শিকার রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এক্ষেত্রে বায়ুদূষণ দূর না করে ওষুধের ওপর বাঁচার প্রবণতা কতটা কাজে দেবে, নতুন করে ভাববার সময় এসেছে। বাজারে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের ওষুধ বিক্রির হারের ওপরও বোঝা যায় আমাদের বায়ুদূষণের অবস্থা।বাতাস দূষিত হওয়ার নির্দিষ্ট মাত্রাকে এখন আর সামনে আনার প্রয়োজন নেই, কারণ কিছু রাস্তা এমন আছে, সেখানে বাতাসে ভারি পার্টিকেল সব ধরনের মানকে অতিক্রম করতে পারবে। ধোঁয়ার অবস্থাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। কয়েক দিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকের তথ্য অনুযায়ী, ৯৮ শতাংশ ইটভাটাই পরিবেশবান্ধব অনুযায়ী করা নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া, মিল-ফ্যাক্টরি থেকে নির্গত ধোঁয়া, কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি থেকে বর্জ্য পানি, যেখান থেকে অবমুক্ত হওয়া সালফারের গন্ধ মিশ্রিত বাতাস, বিভিন্ন যানবাহন ও আবাস, অফিস থেকে এসির নির্গত গ্যাস, মোবাইল টাওয়ারের তরঙ্গ, পোলট্রি ও ট্যানারি শিল্প এবং আবর্জনার ভাগাড় থেকে অবমুক্তি অ্যামোনিয়ার দুর্গন্ধ সব উপাদান মিলে বাতাস আজ নিশ্বাসের অনুপোযোগী প্রায়। উল্লেখ্য, এসবের বাইরেও রয়েছে বায়ুদূষক, সেগুলোও মারাত্মক ঝুঁকির কারণ। বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার-২০১৯ (এসওজিএ) শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বায়ুদূষণজনিত মৃত্যুর হারের দিক থেকে পৃথিবীতে পঞ্চম! এমন পরিস্থিতিতে অনেক বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে সামনের দিনে।দুঃখজনক ব্যাপার হলো, রাস্তায় ধুলাজনিত যে পার্টিকেলগুলো বাড়ছে, তা রাস্তা সঠিকভাবে পরিষ্কার না করার কারণেই। অনেক সময়ই দেখা যায়, রাস্তা পরিষ্কার করছে যারা, তারা রাস্তার ডিভাইডার ঘেঁষে ধুলোগুলো রেখে চলে যাচ্ছে! এর ফলে কিছুক্ষণ পর রাস্তার ধুলো রাস্তায়ই ফিরে আসছে। এখানে সিটি করপোরেশনের অনেক কাজ করার আছে। রাস্তা মেরামত দীর্ঘস্থায়ী হওয়াতেও বাতাসে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মূলত রাস্তার ধুলোর জন্য বায়ুদূষণের হার অনেক বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে চলাচলকারী শিশুদের ওপর!উন্নত বিশ্বের মতো স্ট্যাক ইমিশন কমিয়ে আনার জন্য মেশিন সঠিকভাবে মেইনটেন্যান্স করা, সঠিক উচ্চতায় চুল্লি স্থাপন করা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফিল্টারিং সিস্টেম করা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক কোম্পানির এক্সোস্ট বের করার জন্য যে চিমনি ব্যবহার করা হয়, তা সরাসরি রাস্তা অভিমুখে দেওয়া। যখন বিদ্যুৎ যাচ্ছে এবং জেনারেটর চালু হচ্ছে, তখনই কালো ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে রাস্তা! এগুলো শিল্পায়নের কোনো নিয়ম হতে পারে না। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহগামী মহাসড়কে এমনটা দেখা যায় বেশি। আঞ্চলিক সড়কে তো কথাই নেই! এসিগুলোতে সিএফসি ফ্রি গ্যাস ব্যবহারের কথা জানে কতজন মানুষ। এসি চলছে, ঠান্ডা হচ্ছে; তাতেই যেন শান্তি অথচ পরিবেশের কী ক্ষতি করছি, এ ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই। এ বিষয়গুলো নিয়ে সামনের দিনে ভাবতে হবে। একদিকে দূষণ, অন্যদিকে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়া, সব মিলয়ে আমরা পতিত হচ্ছি মৃত্যুবরণ করার হুমকির দিকে! সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশবাদীদের কাছে অনুরোধ, এখনই ভাবুন দূষণ কমানো নিয়ে, আর সবুজ প্রকৃতি নিশ্চিতে কাজ করুন একাগ্র চিত্তে।
লেখকঃ মুহম্মদ আলতাফ হোসেন
সভাপতি, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা।