যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আপিল আদালত শুক্রবার (১৯ আগস্ট) মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা দু’জন ভুক্তভোগীর মামলা শুনানি শুরু করেছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার দ্বিতীয় ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব আপিলের তিন বিচারকের একটি প্যানেল ওয়েড রবসন ও জেমস সেফচাক নামের ওই দু’জনের মামলা শুনানি শুরু করেছেন।
এই বিচারকদের মতে, এই দু’জনের মামলা নিম্ন আদালতের খারিজ করা উচিৎ নয়। তারা জ্যাকসনের মালিকানাধীন দু’টি কর্পোরেশনের সাথে আইনগত লড়াই চালানোর বৈধ দাবি করতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়ার নতুন একটি আইনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল আদালত যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো পুনরায় বিচার শুরু করেছে।
এর আগে ২০১৩ সালে রবসন এবং পরের বছর সেফচাক এই অভিযোগ উত্থাপন করেন।
তবে ২০১৯ সালে এইচবিও ডকুমেন্টারি ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’-এ তাদের গল্প বলার জন্য দুই তরুণ ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে।
একজন বিচারক ২০২১ সালের মামলাগুলো খারিজ করে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, এমজেজে প্রোডাকশন ইনকরপোরেশন ও এমজেজে ভেনচারস ইনকরপোরেশন বয় স্কাউট বা চার্চের মতো কাজ করবে তা আশা করা যায় না। অভিযোগকারীরা আশা করছে প্রতিষ্ঠান দু’টি শিশুদের সব ধরনের সুরক্ষার দেবে।
২০০৯ সালে মারা যাওয়া জ্যাকসন কোম্পানিগুলোর একমাত্র মালিক এবং একমাত্র শেয়ারহোল্ডার ছিলেন।৯ উচ্চ আদালতের বিচারকরা এই মতের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
তাদের প্রতিবেদনে উচ্চ আদালতের বিচারকরা লিখেছেন: ‘শিশুদের যৌন নির্যাতনকারী একজন কর্মচারীকে সুবিধা দেয় একটি প্রতিষ্ঠান এবং তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় না। কারণ যৌন নির্যাতনকারী নিজেই ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক।’
তারা আরো বলেছে, ‘শুধু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার হওয়ার কারণে অপরাধীর কিছুই হবে না, এটা এক ধরনের বিকৃতি। তাই আমরা করপোরেশনগুলো জন্য দেয়া রায় বাতিল করি।’
অন্যদিকে, জ্যাকসন এস্টেটের অ্যাটর্নি জোনাথন স্টেইনসাপির জানিয়েছেন তারা ‘হতাশ’।
স্টেইনসাপির অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) একটি ইমেলে বলেছেন, ‘দু’জন বিশিষ্ট বিচারক গত এক দশকে বারবার এই মামলাগুলো বহুবার খারিজ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করি যে মাইকেল এই অভিযোগগুলো থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হবে। শুধুমাত্র অর্থ হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে মাইকেলের মৃত্যুর কয়েক বছর পরে এসব মামলা করা হয়েছে।’
শুক্রবার স্টেইনসাপির বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি সত্য শেষ পর্যন্ত আবারও মাইকেল ন্যায়বিচার পাবেন এবং আমরা জয়লাভ করব।’
রবসন ও সেফচাকের একজন অ্যাটর্নি ভিন্স ফিনাল্ডি একটি ইমেলে বলেছেন, তারা ‘সন্তুষ্ট এবং বিস্মিত নন’ যে আদালত পূর্ববর্তী বিচারকের ‘এই মামলাগুলোতে দেয়া ভুল রায়গুলো বাতিল করেছেন।’
তিনি বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ায় এ ধরনের অপরাধে শাস্তির জন্য কোনো আইন ছিল না। তাই রাজ্য ও দেশজুড়ে শিশুরা বিপন্ন ছিল। আমরা ন্যায়বিচারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’
রবসন (৪০) একজন কোরিওগ্রাফার। তিনি ৫ বছর বয়সে জ্যাকসনের সাথে পরিচিত হন। তিনি তিনটি জ্যাকসন মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেছেন, জ্যাকসন তাকে সাত বছর ধরে শ্লীলতাহানি করেছেন।
সেফচাক (৪৫) বলেন, পেপসির একটি বিজ্ঞাপনের চিত্রগ্রহণের সময় তিনি জ্যাকসনের সঙ্গে দেখা করেন। সেসময় তার বয়স ছিল ৯ বছর। জ্যাকসন তাকে প্রায়ই ডাকতেন এবং নির্যাতন করার আগে তাকে উপহার দিতেন।
এপি সাধারণত যৌন নির্যাতনের শিকারদের নাম প্রেকাশ করে না। কিন্তু রবসন ও সেফচাক তাদের পরিচয় ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন।
সূত্র : ইউএনবি