রুশ নেতাদের বিচারের জন্য আদালত গঠনে অগ্রগতির অভাবের নিন্দা করেছে ইউক্রেন। এদিকে, রোববার ভোরে কিয়েভ জুড়ে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
রুশ নেতাদের বিচারের জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ইউক্রেন। এছাড়াও রাশিয়ার স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর নিয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে তারা।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমরা দুটি বিষয়ে এক ধরনের অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছি। প্রথম ইস্যুতে আমাদের মতপার্থক্য রয়েছে এবং দ্বিতীয় বিষয়ে স্পষ্টতই ইচ্ছার অভাব রয়েছে।’
তিনি বলেছিলেন, জি-৭ গ্রুপ একটি হাইব্রিড ট্রাইব্যুনালকে সমর্থন করেছে যা ইউক্রেনিয় আইনের ভিত্তিতে হবে। যেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্টিন বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়ার দাবি করা হবে। নাহলে রুশ নেতাদের কোনো বিচারই হবে না।
ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেল অ্যান্ড্রি কোস্টিন বলেছেন, ‘বিবাদীর বেঞ্চে পুতিন ছাড়াই ট্রাইব্যুনাল হবে। এটা কোনো ইউক্রেনিয়কে বোঝানো অসম্ভব।’
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটশ্চকো বলেছেন, কিয়েভে রুশ বিমান হামলা আটকাতে ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়োজিত হয়েছে।
বাখমুতের কাছে স্পেনের এনজিও কর্মী নিহত
বাখমুত শহরের কাছে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক স্প্যানিশ সাহায্যকর্মী নিহত হয়েছে বলে স্পেনের সরকার জানিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোসে মানুয়েল আলবারেস ভারতের নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে বলেছেন, ‘একটি গাড়িতে প্রজেক্টাইল হামলা করা হয়েছে। সেখানে স্পেনের নাগরিক ওই এনজিও কর্মী ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা দেয়ার কাজ করছিলেন।’
আলবারেস বলেন, ‘আমাদের মৌখিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে।’
স্প্যানিশ পত্রিকা এল মুন্দো জানিয়েছে, ওই স্প্যানিশ নারী একটি এনজিওর প্রধান ছিলেন।
সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, গাড়িতে আগুন লেগে একজন কানাডিয়ানেরও মৃত্যু হয়েছে। একজন জার্মান ও একজন সুইডিশ নাগরিক আহত হয়।
ড্রোন হামলা রুখেছে কিয়েভ
ইউক্রেন জানিয়েছে, কিয়েভকে লক্ষ্য করে ছোড়া দুই ডজন ড্রোন রাতারাতি গুলি করে মাটিতে নামানো হয়েছে।
কিয়েভ সিটি মিলিটারি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান সের্গি পপকো মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে লিখেছেন, ‘ড্রোনগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে এবং বিভিন্ন দিক থেকে রাজধানীতে প্রবেশ করেছে।’
ড্রোনের সংখ্যা ইউক্রেনের বিমানবাহিনী ঘোষণা করবে বলে জানান পপকো। ড্রোনের সংখ্যা দুই ডজনেরও বেশি হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
রোববার ইউক্রেনের রাজধানী জুড়ে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। যদিও হামলা প্রতিহত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন। মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো টেলিগ্রামে লিখেছেন, ‘ড্রোন এখনো কিইভের দিকে যাচ্ছে!’
রয়টার্স সংবাদ সংস্থার এক সাংবাদিক অন্তত পাঁচটি বিস্ফোরণের কথা শোনার কথা জানিয়েছেন, যেখানে ফরাসি এএফপি সংবাদ সংস্থার সাংবাদিক দশটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন।
ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ স্ভিয়াতোশিনিস্কি, শেভচেনকিভস্কি এবং পোডিল জেলায় পড়েছিল বলে জানান মেয়র। প্রাথমিক তথ্যের বরাত দিয়ে একজন আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
শনিবার গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভ বলেছেন, রুশ ভূখণ্ডে ইউক্রেনের মূলত সামরিক লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করছে।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়ানদের থেকে এখানেই ইউক্রেনিয়রা আলাদা।’
কিয়েভে আলোচনা চলাকালীন বুদানভ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ‘রাশিয়ার ওপর ইউক্রেনের আক্রমণের কারণে মানুষ কষ্ট পাবে না।’
তার কথায়, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো পুড়ে গেছে। উচ্চ প্রযুক্তির মেশিনগুলো পুড়েছে, সেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে। বড়মাপের নাশকতার ব্যবস্থা রয়েছে।’
এদিকে, রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইউক্রেনের কয়েকটি হামলায় বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছেন।
যুদ্ধের শুরুতে রুশ ভূখণ্ডে কিয়েভের আক্রমণ বিরল ছিল, কিন্তু সম্প্রতি তা তীব্রতর হচ্ছে।
৯০ ভাগ ইউক্রেনিয়ের বিশ্বাস অধিকৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধার সম্ভব
একটি পোলিং ইনস্টিটিউটের জরিপ অনুযায়ী, ইউক্রেনিয়দের ৯০ ভাগ বিশ্বাস করে যে রাশিয়ার দখলকৃত সমস্ত ইউক্রেনিয় অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম কিয়েভ। মাত্র ছয় ভাগ বিশ্বাস করে যে এটি সম্ভব নয়।
জার্মান সংবাদপত্র বিল্ড আম সনটাগের জন্য পরিচালিত জরিপে বলা হয়েছে, উত্তরদাতাদের ৮৩ ভাগ পরের বছর আরেকটি পাল্টা হামলার দাবি করেছেন। যদি না এই বছরের পাল্টা হামলা যথেষ্ট সফল না হয়।
উত্তরদাতাদের মাত্র ৩০ ভাগ রাশিয়ার সাথে সরাসরি আলোচনা চেয়েছেন। যেখানে ৬৩ শতাংশ আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সূত্র : ডয়চে ভেলে