বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইনের প্রস্তাব নিবর্তন মূলক আইন প্রণয়ন করার নামান্তর।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুরে গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সোমবার (৭ আগস্ট) অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্ত সমূহ জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
জানা যায় সাড়ে ৮টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য যথাক্রমে :
১. মির্জা আব্বাস
২. বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
৩. নজরুল ইসলাম খান
৪. মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
৫. জনাব আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী
৬. সালাহ উদ্দিন আহমেদ
৭. বেগম সেলিমা রহমান
৮. ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু
সভায় আলোচ্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে নিম্নে বর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়। সভায় মহাসচিব বিগত শুক্রবারের (২৮ জুলাই) মহাসমাবেশ এবং শনিবারের (২৯ জুলাই) অবস্থান কর্মসূচী সম্পর্ক সভাকে অবহিত করেন এবং পরবর্তীতে প্রতিবাদ কর্মসূচী বিষয়ে অবহিত করেন।
সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার সহধর্মীনি ডাঃ জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার ফরমায়েসী রায় প্রদানে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
সভা মনে করে বর্তমান অবৈধ সরকার, বিচার বিভাগকে অবৈধ, অগণতান্ত্রিক ফ্যাসীবাদী শাসনকে স্থায়ী করার লক্ষে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। বিচার বিভাগের সকল স্তরগুলোকে দলীয় করনের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে দেশের জনপ্রিয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদানকারী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান, তার সহধর্মীনি অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ডা: জুবাইদা রহমান, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দুদক ও দলীয় পুলিশ কর্তৃক দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার বেআইনি ফরমায়েসী রায়, নিম্ন আদালতের স্বেচ্ছাচারীতা, উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্ছিত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলন দমন করার জন্য ন্যকারজনকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সভা মনে করে সম্প্রতি সরকারের আজ্ঞাবহ দুদক দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিশেষ করে অরাজনৈতিক ব্যক্তি ডা: জুবাইদা রহমানের ফরমায়েসী রায় সেই সত্যই প্রমাণ করে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জনাব আমান উল্লাহ আমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য লুৎফরজ্জামান বাবরসহ অসংখ্য রাজনৈতিক নেতা এর ফরমায়েসী রায়, নিম্ন আদালতে সাতক্ষীরা থেকে বারবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য জনাব হাবিবুর রহমান হাবিবকে ৭০ বৎসর কারাদণ্ড, পাবনা জেলা বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক কে এম আক্তারুজ্জামান, ঈশ্বরদীর পৌর বিএনপির নেতা জাকারিয়া পিন্টু ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমান বাবলুসহ নয়জনকে মৃত্যুদণ্ড ২৫ জনকে যাবজীবন ও ১৩ জনকে ১০ বৎসরের কারাদণ্ড প্রদান করেছে।
সভায়, সোমবার (৭ আগস্ট) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ইসাহাক সরকারসহ ২৭ জনকে দু’বৎসর সাজা প্রদান, এই সত্য সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে সরকার অনৈতিক, অসাংবিধানিক, বেআইনি ফরমায়েসী রায় প্রদান করে। বিরোধী রাজনীতিকে নির্মূল করার নীল নকশা বাস্তবায়ন করছে। বিচার বিভাগে আওয়ামী রাজনীতির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বিচারকের পদে নিয়োগ দিয়ে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ দলীয় করন করা হচ্ছে।
সভায়, বিচারকদের পবিত্র আসনে যারা বসে আছেন তাদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। সভায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ডা: জুবাইদা রহমানাসহ সাজাপ্রাপ্ত সকল রাজনৈতিক নেতার রায় বাতিল ও সকল মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়।
সভায়, গণতন্ত্র পুনুরুদ্ধারের ১ দফা দাবিতে শুক্রবার (২৮ জুলাই) নয়া পল্টনে মহাসমাবেশ সফল করার জন্য বিএনপি যৌথ আন্দোলনে অংশ গ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের সকলস্তরের নেতা-কর্মী ও সর্বস্তরের জনগণকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানানো হয়। সভা মনে করে এই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন আরো বেগবান হয়েছে। পরের দিন শনিবার (২৯ জুলাই) ঢাকা মহানগরের প্রবেশ মুখে ঘোষিত কর্মসূচি পালনে জনগণ পুলিশের সহিংশ বাধার মুখেও ১ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেছে। সভায় জনগণকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানানো হয়। পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে আহত নেতা-কর্মীদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়।
জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ওপর নৃশংস অমানবিক আক্রমণ এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়। একই সাথে পুলিশ, গুলি, টিয়ার গ্যাস শেল, লাঠি চার্জ, জল কামান ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বানচাল করে দেয়া, শত শত মানুষকে আহত করা গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সভায় অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সবাইকে নিঃশর্ত মুক্তি ও সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। সভায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১ দফা আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষে সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বয় করে কর্মসূচি প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায়, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। সভা মনে করে এটা নাম পরিবর্তন করে নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন করার নামান্তর। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত বক্তব্য পরবর্তীতে প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভা শেষে সভাপতি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভা মুলতবী করেন।