সৌদি সরকার বিদেশগামী ২৮ পেশার কর্মীদের জন্য দক্ষতার সনদ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার সৌদি দূতাবাস থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পররাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, যতদ্রুত সম্ভব এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করানোর জন্য দূতাবাস থেকে অনুরোধ জানানো হলো। এর আগে সৌদি আরবগামী চাটি পেশার কর্মীদের জন্য দক্ষতার সনদ বাধ্যতামূলক ছিল। এবার নতুন করে আরো ২৮টি পেশার কর্মীদের জন্য দক্ষতার সনদ বাধ্যতামূলক করার কথা জানিয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ জুলাই রয়্যাল অ্যাম্বাসি অব সাউদি এ্যারাবিয়া, ঢাকা, থেকে অতি জরুরি উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (ওয়েস্ট এশিয়া উইং) কাছে একটি চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ববস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়। চিঠির সাথে এর অনুলিপি দেয়া হয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালকের কাছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থন ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: শহিদুল আলমের সাথে এ প্রসঙ্গে গতকাল জানতে যোগাযোগের চেষ্টার পরও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে ব্যুরোর একাধিক কর্মকর্তা নিজেদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, দূতাবাস থেকে আরো ২৮টি পেশার কর্মীদের জন্য দক্ষতার সনদ চাওয়া সংক্রান্ত একটি চিঠি ঢাকার সৌদি দূতাবাস থেকে এসেছে। এমন চিঠি আসার পর থেকেই সৌদি আরবগামী কর্মীদের সনদ ছাড়া ছাড়পত্র দেয়া বন্ধ রয়েছে। তারা বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও তাদের প্রতিনিধিদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে, দূতাবাস থেকে যেসব পেশার কর্মীদের দক্ষতার সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে আবেদন করার সময় অবশ্যই জমা দিতে হবে। নতুবা তার আগ পর্যন্ত বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া বন্ধ থাকবে। এক প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তারা নয়া দিগন্তকে বলেন, এসব দক্ষতার সনদ আসলে কাদের কাছ থেকে নিতে হবে সে ব্যাপারে কিন্তু দূতাবাসের চিঠিতে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সৌদি আরবে ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত একাধিক জনশক্তি ব্যবসায়ী গতকাল নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা সৌদি আরবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মী প্রেরণের কাজ করছি। আগে ৪-৫টি পেশার কর্মীদের ক্ষেত্রে দক্ষতার সনদ বাধ্যতামূলক ছিল। সেই নিয়ম মেনেই আমরা কর্মীদের ক্লিয়ারেন্স নিয়ে বিদেশে পাঠাচ্ছিলাম। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার থেকে জনশক্তি ব্যুরোর কর্মকর্তারা নতুন নিয়মে দূতাবাস থেকে যে ২৮টি পেশার কর্মীদের জন্য সনদ বাধ্যতামূলক করার কথা বলেছে, সেটি না দেয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকবে বলে তারা আমাদেরকে জানিয়েছেন। তারা বলেন, যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে কিছুটা সময় দেয়া দরকার। আজকে চিঠি এলো আর আজকেই যদি বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে আমরা কিভাবে এই সার্টিফিকেট সংগ্রহ করব। সৌদি সরকার নিয়ম করে থাকলে আমরা অবশ্যই অভিজ্ঞতার সনদ জমা দেবো। তবে আমাদেরকে এ ক্ষেত্রে সময় দিতে হবে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের বায়রার নেতারা এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠক করলে বিষয়টির একটা সঠিক সুরাহা হবে বলে তারা আশা করছেন। তবে নতুন করে এই নিয়ম চালু হওয়ায় সৌদি আরবে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক যাওয়ার হার আরো কমে আসবে বলে মনে করছেন তারা।
যে ২৮টি পেশার সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে প্রফেশন ক্যাটাগরি কনস্ট্রাকশন ১-১৫ পর্যন্ত পদে মাইন রুফিং ইনস্টলার, ড্রিলিং ওয়ার্কার, ডেমোলিশন ওয়ার্কার, মেশন, ক্লে অ্যান্ড সিনথেটিক মেকার, ব্রিকস মেকার, স্টোন মেকার, বিল্ড স্টাকস, স্টোন মেকার, রেডি মিকস কংক্রিট, কনস্ট্রাকশন, মোজাইক মল্ডিং এজেন্ট, কমপোনেন্টস, শিট মেটাল রুফিং এবং ওয়ার্কার। এ ছাড়া ৫টি ট্রিলিং পদের মধ্যে টিম্বার অ্যান্ড মুড রুফিং, স্টিম কনস্ট্রাকশন, রুফিং ওয়ার্কার, উডেন ফ্লোর ইনস্টেলার ও পেভড। ইনিশিয়াল কার মেইনটেন্যান্সের মধ্যে ইউজ টায়ার রিবিল্ডার, মোজাইক কমপাউন্ড, ভেহিক্যাল গ্লাস রিপেয়ার ও টায়ার কমপাউন্ড বিল্ডার। ২৮ পেশার দক্ষতা সনদের মধ্যে প্লাস্টার মেলিসা ছাড়াও অটোমোবাইল মেকানিকের মধ্যে কার মেকানিক, বাস মেকানিক ও মোটরসাইকেল মেকানিক পদের কর্মী রয়েছে।