নাহিদ মিথুনঃ বুদ্ধিহীন মানুষ যেমন সচারচর খুজে পাওয়া যায় না তেমনি বুদ্ধিমান মানুষও তেমন খুজে পাইনি; তবে কিছু অনুর্বর বুদ্ধির লোকদের দেখেছি বুদ্ধি বিক্রির প্রচেষ্টা৷ অনুর্বর বলছি এই একারনেই যে ঐ বন্ধ্যা বুদ্ধি দিয়ে নিজের “সামান্য” পকেট ভারি হওয়া ছারা দেশ ও মানুষের বিশেষ কোনও লাভ হইনি। “সামান্য” বলছি এই কারনে যে হাজার কোটি টাকা থাকলে তার ক্ষুধা মেটেনা এবং অসুস্থতা, বার্ধক্য ও মৃত্যুকে এড়িয়ে যেতে পারেনা।
সব শ্রেণীর মানুষ বুদ্ধি ব্যাবহার করে জীবন নির্বাহ করে। এখন “বুদ্ধিজীবী” র মানেটা খুজে বের করা দরকার। অনেক রিক্সা চালককে জিজ্ঞাসা করেছি কেন তারা বেশি আয়ের জন্য মটর গাড়ি চালায় না এবং আগ্রহীও না । সেখানে দেখেছি তারা রিক্সা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের সামর্থ,স্বাধীনতা ও চারপাশের পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবং ঐ পেশাতেই সে খুশি। মাদকসেবীদের দেখেছি অভিনব সব পন্থায় মাদক কেনার পয়সা জোগার করতে। হাসপাতালে দেখেছি মুদির দোকানাদের অতি উচ্চ মুল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা করতে। অসাধু ডাক্তারদের দেখেছি সকল আইন অমান্য করে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন না করে, বাইরে কাজ করে পয়সা নিতে এবং উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে বুদ্ধিকে ব্যবহার করতে। প্রমানহীন খুন করার জন্য খুনিকে বুদ্ধির সাহায্য নিতে হয়, পরবাসে স্বামী থাকা দেহ ব্যবসায়িকেও নিতে হয় বুদ্ধির আশ্রয়। অপরাধ দমনে ও অপরাধী কে খুজে বের করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেও নিতে হয় বুদ্ধির সহায়তা। দেশের সকল ধরনের বুদ্ধিওয়ালা মানুষদেরকে সঙ্গে নিয়ে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাষ্ট্র প্রধানকেও বুদ্ধি ব্যবহার করতে হয় ও সিদ্ধান্ত দিতে হয় জটিল সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য।
এক্ষেত্রে কিছু সংখ্যক সাহিত্যিক, লেখক, অধ্যাপক, সাংবাদিককে বুদ্ধিজীবী খেতাব দেওয়ার মানে টা কী? সম্মান জানাতে হলে আরও কতকিইতো উপাধি ব্যবহার করা যেতে পারে।
পাড়া-মহলায় দেখা যায় এলোমেলো চুলের, কাধে চটের ব্যাগ, পায়ে সেন্ডেল, গায়ে পাঞ্জাবি ও হাতে সিগারেট ধরা ব্যক্তিকে বুদ্ধিজীবী বলে ডাকে ও আড়ালে মুখ টিপে হাসে। আবার এই একই মহলায় দেখা যায় কোন একজন নরম সভাবের মানুষ কে দেবতার মত ভক্তি করতে সমাজে তার উপকারি অবদানের জন্য।
অনেক আগে একজন লেখক “বুদ্ধিজীবী” শব্দটির ময়নাতদন্ত শুরু করেন৷ বুদ্ধিজীবী সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি টি এস এলিয়টের একটি বিখ্যাত কবিতা উদ্ধৃত করলেন যার অনুবাদঃ প্রজ্ঞা কোথায়, আমরা হারিয়ে গেছি জ্ঞানে, জ্ঞান কোথায়, আমরা হারিয়ে গেছি তথ্যে ৷ লেখকের প্রশ্ন সত্যিকারের বুদ্ধিজীবী কে? যিনি ইন্টারনেট থেকে ডাটা ঘাঁটাঘাঁটি করে উলটা-পাল্টা করে কিছু একটা কবিতা, প্রবন্ধ বা উপসম্পাদকীয় আকারে প্রকাশ করেন আর সুযোগ বুঝে বৈধ-অবৈধ সকল শ্রেণীর প্রভাবশালীদের সাথে পাঞ্জাবী পরে ছবি তুলে তা নানা জায়গায় প্রচার করে বেড়ান? নাকি যিনি প্রজ্ঞা নিয়ে কাজ করেন? প্রজ্ঞা চর্চা করেন, এমন মানুষ সমাজে কয়জন আছেন? এরপর লেখককে প্রশ্ন করা হয়েছিল তাহলে নিজের পরিচয় কী দেবেন? তিনি বললেন আমি “কলমজীবী” ৷ “কলম পিষে খাই৷” বুদ্ধিজীবী কি তবে হাস্যকর কোন বিষয়? যা একদল মানুষ জুতা সারতে গিয়েও নিজেকে তা হিসেবে জাহির করতে পছন্দ করেন, আর পাশের আরেক দল তা শুনে দাঁত বেরকরে হাসেন?
কায়িক শ্রম আর মগজের শ্রমের মধ্যে আসলে কোনো তফাত নেই৷ দুই দুয়ের পরিপূরক৷ মানুষ ভেদে সেই শ্রম ব্যবহারের মাত্রা ও প্রচারের তফাত হয় মাত্র৷
নাহিদ মিথুন
লেখক ও সাংবাদিক
ইমেইলঃsamataldesk@gmail.com