নাহিদ মিথুনঃ সাংবাদিকদের শীর্ষ চার সংগঠনের ১১ নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিএফআইইউ৷ ১২ সেপ্টেম্বর বিএফআইইউ থেকে এ বিষয়ে একটি চিঠি সকল ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে৷ চিঠিতে ওই ১১ সাংবাদিকের নাম, সাংগঠনিক পদবি, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে৷
এরই প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্দোলনে নেমেছে সাংবাদিকদের ৬টি সংগঠন৷
আমরা জানি সাংবাদিক নেতারা অধিকাংশই সৎ মানুষ। কিন্তু সাংবাদিক সংগঠনের নেতা হওয়া কি এমন লাভ জনক? কেন সেই পদ পাওয়ার জন্য এত লবিং, এত কলাকৌশল ও বিরাট পরিমান অর্থ ব্যয় করা হয়? ছোট মাপের শহর গুলোতে দলভাড়ি করার জন্য কেনো জুনিয়র সাংবাদিকদের সামনে সংগঠনের সদস্য বানানোর অল্পদামি মূলা ঝোলানো হয়? কেন স্বাধীনচেতা সাংবাদিকদের দমনের জন্য কুটকৌশল ব্যবহার করা হয়? কেন বলা হয় “ও কিসের সাংবাদিক / ও কোনও সাংবাদিক না”?
সাংবাদিকের গাড়ি-বাড়ি আছে শুনলেই, তাকে অসৎ মনে করার কোনো কারণ নেই৷ কয়েক বছর ভালো সংবাদ মাধ্যমে বেতন ভুক্ত সাংবাদিকতা করলে, একটু হিসাব করে চললে; ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে একটা ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনা সম্ভব৷
১১ সাংবাদিকের আগেও অন্য পেশাজীবীদের ব্যাংক হিসাব তলবের উদাহরন আছে৷ যেমন ২০২০ সালে দুদকের অনুরোধে ৪০০ জনের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছিল৷ আর ওই হিসাবগুলো তলব করা হয় ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি এবং টেন্ডার ও চাঁদাবাজির ঘটনায়৷ ওই ৪০০ জনের মধ্যে রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী আছেন৷ তবে তখন তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি৷ ২০১৪ সালে ২০০ জন ডাক্তারের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছিল, প্রকৃত আয় গোপন করে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে৷
গত ১২ আগস্ট অভিনেত্রী পরীমনি, মডেল পিয়াসা ও হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ আট জনের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়৷ সম্প্রতি ইভ্যালি ও আলেশা মার্টসহ ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান ও এমডির ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে৷
প্রতিবাদ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা দাবি করেছেন, ‘‘সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর জন্য বেছে বেছে সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলবের এই চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে সাংবাদিক নেতারা তো সৎ মানুষ; ভয়ের কি আছে? ব্যাংক হিসাব তলবের সাথে সংবাদমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর চাপের কী সম্পর্ক আছে?
দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান গনমাধ্যমকে বলেনঃ “ব্যাংক হিসাব তলব করার আইনগত বিধান আছে৷ এর জবাব আইনের মাধ্যমেই দিতে হবে৷ নাগরিকদের সম্পদের হিসাবও তলব করার আইন আছে৷”
২০ সেপ্টেম্বর তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘‘সরকার যে কারও ব্যাংক হিসাব তলব করতে পারে৷ এমপি, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তাদেরও ব্যাংক হিসাব তলব হয়৷ তবে কেউ স্বচ্ছ থাকলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই৷ কারণ, এই ব্যাংক হিসাব থেকে যখন তাদের স্বচ্ছতা বেরিয়ে আসবে, তখন মানুষের সামনে তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে৷’’
বড়মাপের সাংবাদিকেরা এসবকিছুইতো জানেন। তাহলে কেন এই আন্দোলন আর এই আন্দোলন কি সংকেত দিচ্ছে তা বোধগম্য হচ্ছে না।
———-
নাহিদ মিথুনঃ লেখক ও সাংবাদিক
ইমেইলঃ samataldesk@gmail.com