কুষ্টিয়া সংবাদদাতাঃ কুষ্টিয়া শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের সমন্বয় পরিষদ ও অবাক বাংলাদেশ লিমিটেড এর যৌথ আয়োজনে জেলার বিভিন্ন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় বচি টুর্নামেন্ট-২০২২ এর বাছাই পর্ব। গতকাল শনিবার (১২ নভেম্বর) কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে সকাল ১০টা থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার সময়সূচী জানানো হয় সকাল সাড়ে ৮টায়। সে হিসেব করেই অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকগণ উপস্থিত হন। সকাল ১০টায় তারা কার্যক্রম শুরু করলেও অতিথিরা আসেন সাড়ে ১০টার পর। কেউ কেউ আসেন ১১টার দিকেও। সেই অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগ মূহৃর্ত থেকে অংশগ্রহণকারী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে তীব্র রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
বাচ্চাদের এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখায় অভিভাবকদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা গেছে। একাধিক অভিভাবকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, বাচ্চারা তো এমনিতেই অস্বাভাবিক। তাদেরকে এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা মানে তাদেরকে শারিরীক ও মানসিক ভাবে অত্যাচার করা। কেউ কেউ তো চরম অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এসব সরকারি কর্মকর্তাগণ ও অনুষ্ঠানের দায়িত্বরত ব্যক্তিগণ কিভাবে এমন ধরনের কাজ করে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
এছাড়া এই অনুষ্ঠান শেষ হতে সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে গেলেও অংশগ্রহণকারী এসব বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বাচ্চাদেরকে দেওয়া হয়নি দুপুরের খাবার। এ নিয়েও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষক-অভিভাবকরা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দৌলতপুর শেখ রাসেল অটিজম প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক মোছাঃ শেফালী খাতুন বলেন, অতিথিদের অপেক্ষায় এভাবে দীর্ঘ সময় এমন অস্বাভাবিক বাচ্চাদের দাঁড় করিয়ে রাখা আসলেও ঠিক হয়নি। আমি বিষয়টি কর্তৃপক্ষদের জানিয়েছি। এই শিক্ষকের মতো একাধিক অটিজম বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
শিক্ষকদের অভিযোগ, আমরা জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে এখানে এসেছি। অস্বাভাবিক এসব বাচ্চারা দীর্ঘ সময় যাতায়াত করে এমনিতেই ক্লান্তিবোধ করেছে। তার উপর এমন দীর্ঘ সময় রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা কোন ভাবেই কাম্য নয়। অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষের এমন অব্যবস্থাপনা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষকরা বলেন, একাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসতে বেশ খরচ হয়েছে। এছাড়া দুপুরের খাবার পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। আসলে এটা অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালীপনা ছাড়া কিছুই নয়।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক শিশু সংগঠক আশরাফ উদ্দিন নজু বলেন, অতিথিদের অপেক্ষায় বাচ্চাদের রোদে দাঁড়িয়ে রাখা চরম অপরাধ, মোটেও ঠিক করেনি।
কুষ্টিয়া শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের সমন্বয় পরিষদের সভাপতি জি এম গোলাম মোস্তফা বলেন, অটিস্টিক শিশুদের রোদে ৪ ঘন্টা রাখার আইন রয়েছে। দুপুরের খাবার বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, এটা আমাদের বাজেটে ছিল না।
কিন্তু বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বাচ্চাদের রোদে দাঁড় করিয়ে রাখার বিষয়ে জাতীয় নিউরো সাইন্স হাসপাতালের রেজিষ্টার্ড ডাঃ মাসুম আলী’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বাচ্চাদের সবসময় সঠিক দেখভাল ও পরিচর্যা প্রয়োজন। সমাজসেবা আয়োজিত এ ধরনের অনুষ্ঠানে অস্বাভাবিক এসব বাচ্চাদের দুই ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখা এটা তাদের খামখেয়ালীপনা ছাড়া কিছুই নয়। বাচ্চাদের কোন ভাবেই চাপ প্রয়োগ করা ঠিক নয়। বিশেষ করে যেসব বাচ্চাদের মানসিক সমস্যা রয়েছে তাদের মস্তিকে চরম আঘাত পড়ে। এতে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
শহর সমাজসেবা অফিসার মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের সাড়ে ৮টায় প্রোগ্রাম শুরুর কথা থাকলেও সব স্কুল এসে পৌঁছাতে না পারার কারণে তাদের কিছুটা সময় রোদে দাড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়া শহর সমাজসেবা কার্যালয় সমন্বয় পরিষদ এর সভাপতি জি এম গোলাম মোস্তফা। বিশেষ অতিথি ছিলেন অবাক বাংলাদেশ লিঃ এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সোহেল রানা, শহর সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সাহিত্য ও ক্রীড়া সম্পাদক কৃষ্ণ কোমল বিশ্বাস ও আশরাফ উদ্দিন নজু সহ আরো অনেকে।