ষ্টাফ রিপোর্টার ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কীটনাশক (গ্যাস ট্যাবলেট) পানে আত্মহত্যার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তৎপর রয়েছে স্থানীয় একটি মহল। এলাকাবাসীর দাবী সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত হলে এই আত্মহত্যার প্রকৃত রহস্য উম্মোচন হবে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে শাহার উদ্দীনের ভ্যানগাড়ি চুরির ঘটনায় শাহাব উদ্দিন দৌলতপুর উপজেলার হোসেনাবাদ কান্দিরপাড়া গ্রামের পচু মন্ডলের ছেলে নয়ন আলী মন্ডলকে অভিযুক্ত করে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মাতুব্বরদের শরনাপন্ন হয়। গত ১২ নভেম্বর ২০২২ তারিখে স্থানীয় মাতুব্বর রফিকুল ইসলাম রফিক, ছামিউল ইসলাম, রাসেল মালিথা, শহিদুল ইসলাম, আব্দুস সালাম, নাজমুল, লিটন, আলমগীর সহ গণমান্য ব্যক্তিবর্গ খাসমথুরাপুর বাজারে শালিসী বৈঠকে বসেন।
বৈঠকে উভয় পক্ষের শুনানী শেষে ভ্যানগাড়িটির মূল্য ১৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করে। অভিযুক্ত নয়ন আলী মন্ডলকে ৬ হাজার টাকা, ভ্যানগাড়ির মালিক শাহাব উদ্দিনকে ছয় হাজার টাকা ও শালিসে উপস্থিত মাতুব্বরগণকে ৬ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে একটি ভ্যানগাড়ী ক্রয় করে দেওয়া অথবা নগদ ১৮ হাজার টাকা গাড়ির মালিককে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে মাতুব্বররা চলমান বিবাদ, ঝগড়া ও কলোহ নিরসনের লক্ষ্যে সর্বসম্মতিক্রমে একটি তিনশ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে এবিষয়ে আপোষ মীমাংসার চুক্তি স্বাক্ষর করেন। পরে লিখিত আপোষনামাটি দৌলতপুর থানা পুলিশ বরাবর প্রেরণ করা হয় বলে জানা যায়।
গত ১৩ নভেম্বর নয়ন আলী মন্ডল একই উপজেলার কাজীপুর গ্রামে তার শ্বশুর বাড়িতে যান এবং রাতেই নিজ গ্রাম হোসেনাবাদ কান্দিরপাড়া ফিরে আসেন। বাড়িতে ফিরে ঐদিন রাতে বাড়ির লোকজনের সাথে ঝগড়া বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। পরদিন ১৪ নভেম্বর সকালে নয়নের নিজ বসত ঘরে তার মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পরিবারের লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। দৌলতপুর থানা পুলিশ মৃত নয়ন আলী মন্ডলের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলে পারিবারিক কবর স্থানে তার দাফন সমপন্ন হয়।
স্থানীয় এলাকাবাসীর ধারণা সে কীটনাশক (গ্যাস ট্যাবলেট) পান করে আত্মহত্যা করেছে। তবে দৌলতপুর থানা পুলিশ বলছে ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
এদিকে এই আত্মহত্যার ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে স্থানীয় একটি মহল শালিসী বৈঠকে উপস্থিত মাতুব্বর ও গ্রাম্যপ্রধানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনায় লিপ্ত রয়েছে। এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর দর্গাপাড়া এলাকার তহিদুল ইসলাম ওরফে আতা মিয়ার ছেলে শামীমের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৩৬ (১)এর১৪(খ)/৮(গ) ধারায় রাষ্ট্রপক্ষ একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নাম্বার ৪৩, তারিখ ২৫.১২.২০১৯ ইং। উক্ত বিচারাধীন মামলার অন্যতম সাক্ষী মথুরাপুর গ্রামের মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে ও স্থানীয় মাতুব্বর রফিকুল ইসলাম রফিক। মাদকদ্রব্য আইনের ৪৩ নাম্বার মামলায় রফিকুল ইসলাম রফিককে আসামী শামীমের পক্ষে ও বিবাদী রাষ্ট্রের বিপক্ষে সাক্ষী দেয়ার অনুরোধ করে আসছিল। তাদের কথায় রফিকুল ইসলাম সম্মতি না দেয়ায় তারা দীর্ঘদিন ধরে রফিকুলকে দেখে নেয়া সহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে। এদিকে গত ১৪ নভেম্বর জনৈক নয়ন আলী মন্ডল আত্মহত্যা করে নিজ বসত করে। এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে রফিকুল ইসলাম ও গ্রাম্য শালিসী বৈঠকে উপস্থিত মাতুব্বরদের সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে ঐ কুচক্রী মহলটি। এলাকাবাসী ঘটনার সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে ।