# মুহম্মদ আলতাফ হোসেন #
আফ্রিকা ও আরব বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের শাসক লিবিয়ার কর্নেল মুয়াম্মার আল-কাজাফি (গাদ্দাফি)। এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে লিবিয়া শাসন ) করেন গাদ্দাফি। লিবিয়ার সেই ক্ষমতাচ্যুত নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন। আল জাজিরা টেলিভিশনসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে এরই মধ্যে গাদ্দাফির গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া লাশের ছবি ও গাদ্দাফিবিরোধী জোট এনটিসির সেনাদের আনন্দ উল্লাসের দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। আল জাজিরার খবরে বলা হয়, গুলিতে নিহত গাদ্দাফির মরদেহ নিরাপত্তার কারণে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে সেই অজ্ঞাত স্থানটি কী লিবিয়ার কোথাও নাকি লিবিয়ার বাইরে ন্যাটোর কোনো ছাউনিতে সে জল্পনাও চলছে। এর আগে এনটিসির এক মুখপাত্র গত বৃহস্পতিবার গাদ্দাফিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয় বলে দাবি করেছিলেন। পরে তাদেরই একজন গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই এ খবরের সত্যতা মেলে যখন গাদ্দাফির গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত লাশের ছবিটি টিভি পর্দায় দেখানো হতে থাকে। গাদ্দাফির আহত ও গ্রেপ্তার হওয়ার খবরটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো প্রথম জেনেছিল গাদ্দাফিবিরোধী এনটিসির কয়েকজন কর্মকর্তার কাছ থেকে। এদের একজনের নাম মোহামেদ লেইস। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে তিনি তখন বলেছিলেন, গাদ্দাফিকে সিরতে থেকে আটক করা হয়েছে। তিনি গুরুতর আহত। তবে এখনো শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। গাদ্দাফির আটকের ব্যাপারে এনটিসির আরেক কর্মকর্তা আবদেল মাজিদ বলেছিলেন, ‘তিনি আটক হয়েছেন। তিনি দুই পায়ে গলিবিদ্ধ হয়েছেন।’ পরে তিনি সাংবাদিকদের আরো জানান, শুধু দুই পায়ে নয়, তার মাথায়ও গুলিবিদ্ধ হয়েছে। একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন মাজিদ। এরপর মোহামেদ লেইস নামের এনটিসির অপর এক কর্মকর্তা দাবি করেন ‘গাদ্দাফি আর বেঁচে নেই। তার দাবির সঙ্গে সুর মেলান এনটিসির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলহাজ। এদিকে এনডিটিভির খবরে এনটিসির একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, মৃত্যুর আগ মুহূর্তে এনটিসির সেনারা তার বাংকারে অতর্কিত হানা দেয়ার পর গাদ্দাফি পালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হলে গাদ্দাফি এটিসি সেনাদের উদ্দেশে ডোন্ট শুট, ডোন্ট শুট বলে চিৎকার করছিলেন। কিন্তু তার কথায় কর্ণপাত না করে এনটিসি সেনারা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এনটিসির একাদশ ব্রিগেডের কমান্ডার আব্দুল হাকিম আল জলিল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় বৈরুতের ডেইলি স্টার পত্রিকাকে বলেন, তিনি গাদ্দাফির অনুগত বাহিনীর প্রধান সেনাধ্যক্ষ আবু বকর ইউনুস জবরের মৃতদেহও নিজের চোখে দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজের চোখে ইউনুস জবরের লাশ দেখেছি। তিনি এ সময় প্রমাণ হিসেবে রয়টার্স ও বৈরুতের ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রতিনিধিকে জবারের রক্তাক্ত লাশের একটি ছবিও দেখান। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জন্মশহর সিরতের পতনের পর এনটিসির হাতে গাদ্দাফির আটক হওয়ার খবরটি প্রকাশ পাবার কিছুক্ষণ পরই তার ও তার প্রধান সেনাপতির মৃত্যুর অসমর্থিত খবরটি পাওয়া যায়। লিবিয়াতে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর গত আগস্টে গাদ্দাফির ৪২ বছরের শাসনের সমাপ্তি ঘটে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে । মাত্র কয়েক মাসের যুদ্ধে সারাদেশ দখলে নেয়ার পর সর্বশেষ গাদ্দাফীর জন্মস্থান সির্তের নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহীরা। গাদ্দাফী ও তার পরিবারের সদস্যরা সির্তেই আছেন, না অন্য কোনো শহরে পালিয়ে গেছেন, এ নিয়ে বিদ্রোহীদের মধ্যে নানা জল্পনা কল্পনা ছিল। তবে তাকে আটকের পর নিশ্চিত হওয়া গেছে সারাদেশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অবশেষে তার জন্মশহর সির্তে প্রতিরোধ ব্যুহ তৈরি করে সেখানে আত্মগোপন করেছিলেন গাদ্দাফী।
আফ্রিকা ও আরব বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘসময়ের শাসক ছিলেন মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি। মাত্র ২৭ বছর বয়সে এক রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর দীর্ঘ ৪২ বছরের বেশি সময় গাদ্দাফি দোর্দণ্ড প্রতাপে লিবিয়া শাসন করেন। গতকাল ২০ অক্টোবর ২০১১ নিজ জš§স্থান সিরতে এনটিসি বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হন তিনি। এর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটল নানান কারণে বিশ্ব রাজনৈতিক অঙ্গনের এক আলোচিত শাসকের।
১৯৪২ সালের ৭ জুন লিবিয়ার সিরত শহরের এক বেদুইন পরিবারে জš§ মুয়াম্মার মুহাম্মদ আল-গাদ্দাফির। শিক্ষাজীবন শুরু করেন মাদ্রাসায়। ১৯৫৬-১৯৬১ সময়ে ফেজানের সাবহা প্রিপারেটরি স্কুলে লেখাপড়া করেন। সেখানেই তার রাজনীতিতে আগ্রহ জšে§। সমমনা বন্ধুদের সঙ্গে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাও সেরে ফেলেন। কিন্তু স্বপ্নপূরণের আগেই ১৯৬১ সালে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবহা থেকে বহিষ্কৃত হন। ভর্তি হন বেনগাজির ইউনিভার্সিটি অব লিবিয়ায়। ভূগোলে পড়াশোনা শুরু করলেও মাঝপথে ১৯৬৩ সালে বেনগাজির সামরিক পরিষদে যোগ দেন। সেখানে তিনি এবং তার অনুগত সামরিক কর্মকর্তারা লিবিয়ার পশ্চিমমুখী রাজতন্ত্রকে উৎখাত করার জন্য গোপন দল গঠন করেন। উল্লেখ্য, ১৯৫১ সালে ইতালির কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর লিবিয়ায় তৎকালীন রাজা মো. ইদ্রিস আল সেনুসি দেশ চালাচ্ছিলেন।
১৯৬৫ সালে প্রশিক্ষণের জন্য ব্রিটেন যান গাদ্দাফি। ১৯৬৬ সালে কমিশনপ্রাপ্ত অফিসার হয়ে লিবিয়ায় ফিরে আসেন। এরপরই হাতের নাগালে আসে ক্ষমতা দখলের সুযোগ। এর সদ্ব্যবহারও করেন তিনি। ১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর। তৎকালীন রাজা মো. ইদ্রিস আল সেনুসি শারীরিক অসুস্থতার কারণে তুরস্ক যান। সুযোগটি তিনি কাজে লাগান। মাত্র ২৭ বছর বয়সী গাদ্দাফি অল্প কয়েকজন সামরিক অফিসার নিয়ে ত্রিপোলিতে এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে লিবিয়ার ক্ষমতা দখল করেন। ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পূর্ণ সহযোগিতা করেছিলেন মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দুল নাসের। এ কারণে নাসেরের মৃত্যুদিবসে এখনও লিবিয়ায় সরকারি ছুটি পালিত হয়। এ অবস্থায় ১৯৮৩ সালে নির্বাসিত অবস্থায় মিসরেই মারা যান সেনুসি। এরপর গাদ্দাফি লেখেন ‘দ্য গ্রিন বুক’। ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত ৩ খণ্ডের এ গ্রন্থে সমাজ এবং রাষ্ট্রসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। ওটাই তখন লিবিয়ার সংবিধান ছিল। দীর্ঘ ৪২ বছরের শাসনমালে বাহারি পোশাক, সানগ¬াস এবং উদ্ভট কর্মকাণ্ড গাদ্দাফিকে এক রহস্যপুরুষ হিসেবে বিশ্বময় পরিচিত করেছে। সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছিল নিরাপত্তার প্রশ্নে দেশের ভেতরে-বাইরে সবসময় তাকে ঘিরে রাখা সশস্ত্র নারী সদস্য।
দুবার বিয়ে করেন গাদ্দাফি। প্রথম স্ত্রী ফাতিহা-আল-নুরির সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ১৯৭০ সালে বিয়ে করেন সাফিয়া ফারকাসকে। এছাড়াও গাদ্দাফির অনেক ‘বান্ধবী’ ছিল। তাদের মধ্যে ইউক্রেনের সেবিকা গালিনা কলোনিৎসা সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন।
৮ সন্তানের জনক গাদ্দাফি, ৭ ছেলে ১ মেয়ে। পালিত মেয়ে হান্না গাদ্দাফি ১৯৮৬ সালে তার বাসভবনে মার্কিন বিমানহামলায় নিহত হন। গাদ্দাফির বড় ছেলে মুহাম্মাদ গাদ্দাফি লিবিয়ান অলিম্পিক কমিটির প্রধান এবং দ্বিতীয় ছেলে সাইফ আল ইসলাম ছিলেন বাবার ডান হাত। রাষ্ট্র পরিচালনায় তার ক্ষমতা ছিল প্রধানমন্ত্রীর সমান। তৃতীয় ছেলে আল সাদি গাদ্দাফি লিবিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের পরিচালক। সাদি নিজেও একজন ভালো ফুটবলার এবং তিনি লিবিয়ার জাতীয় দলে খেলেন। বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়েছেন তিনিও। চতুর্থ ছেলে হানিবাল গাদ্দাফি তেমন খ্যাত নন। তিনি প্যারিসে ৪ মাস জেল খেটেছিলেন। পঞ্চম ছেলে বিলাল ছিলেন লিবিয়ার একজন সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা। ৩০ এপ্রিল ন্যাটোর হামলায় মারা যান ষষ্ঠ ছেলে সাইফ আল আরব। সপ্তম ছেলে খামিস গাদ্দাফিও মারা গেছেন বলে প্রচার করেছে বিদ্রোহীরা।
গাদ্দাফি তনয়া আয়েশা গাদ্দাফি একজন আইনজীবী। সাদ্দাম হোসেনের পক্ষে আইনি লড়াই করে বেশ আলোচিত হন আয়েশা।
বহুদেশ ভ্রমণ করেছেন গাদ্দাফি। চেয়েছিলেন লিবিয়ার সঙ্গে অন্যান্য দেশের সুসম্পর্ক। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বের বহু দেশে। বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোতে জনপ্রিয়তার সম্মান হিসেবে আফ্রিকার দুশতাধিক রাজা ও আদিবাসী নেতা তাকে ‘রাজাদের রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
জীবদ্দশায় ইসলামপন্থি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ঐক্যবদ্ধ প্যান-আরব গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন গাদ্দাফি। ১৯৭৭ সালে দেশের নাম বদলে গ্রেট সোস্যালিস্ট পপুলার লিবিয়ান জামাহিরিয়াহ (জনতার রাষ্ট্র) নাম দেন। তার বিরুদ্ধে স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখার জন্য হাজার হাজার মানুষকে অবৈধভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ও বন্দি করে রাখার অভিযোগ আছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের। ১৯৭৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প ডেভিডে আরব বিশ্বের তৎকালীন বিবদমান দুপ্রতিপক্ষ মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের জন্য তাদের মুখোমুখি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন গাদ্দাফি। তবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে অত্যন্ত কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আরব দেশ তার সমালোচনা করে। এসময় থেকে তার প্যান-আরব নীতি পরিবর্তিত হয়ে প্যান-আফ্রিকা পরিকল্পনায় রূপ নেয়। তার ঐক্যবদ্ধ আফ্রিকা গঠনের উদ্যোগই পরে আফ্রিকান ইউনিয়নের জš§ হয়। তবে পশ্চিমা বিশ্বে সবসময়ই গাদ্দাফিকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে দেখা হয়।
কলাম্বিয়ার রেভুলেশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলাম্বিয়া (ফার্ক) এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের আইরিশ রিপাবলিকান আর্মিকে (আইআরএ) সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে।
১৯৮৬ সালে জার্মানির বার্লিনে একটি নাইটক্লাবে বোমাহামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ২ সেনাসদস্য নিহতের ঘটনায় লিবিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এসময় গাদ্দাফিকে ‘পাগলা কুকুর’ বলেও অভিহিত করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। এ ঘটনার পর ত্রিপোলি ও বেনগাজিতে যুক্তরাষ্ট্রের বোমাহামলায় গাদ্দাফির পালিত মেয়েসহ ৩৫ জন লিবীয় নিহত হয়। এতে ষড়যন্ত্র করেছিল তার দেশের রেভুলেশনারি আর্মির কিছু সদস্য। যাদের সঙ্গে গাদ্দাফির বিরোধ চলছিল। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলিত হয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল।
১৯৮৮ সালে স্কটল্যান্ডের লকারবিতে প্যানঅ্যাম এয়ারলাইন্সের একটি জাম্বো জেট বিমানে বোমাহামলায় ২৭০ জন নিহতের ঘটনায় গাদ্দাফির জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পরিকল্পনা করার জন্য অভিযুক্ত হন একজন লিবীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা। বহুবছর ধরে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন তিনি। ফলে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হয় লিবিয়াকে। ২০০৩ সালে গাদ্দাফি প্রশাসন এ বোমাহামলার দায় স্বীকার করে নেয়। এ ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের ১ কোটি ডলার পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হন তিনি। এছাড়া তার দখলে থাকা গণবিধ্বংসী অস্ত্র ধ্বংস করার ঘোষণাও দেন এসময়। ফলে তার প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর মনোভাবের পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। ২০০৯ সালে অভিযুক্ত লিবীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলে গাদ্দাফির পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এতে আবারও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সমালোচনার মুখে পড়েন গাদ্দাফি।
২০০৯ সালে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে যান গাদ্দাফি। এ অধিবেশনে ১৫ মিনিটের বদলে দেড় ঘণ্টা ভাষণ দেন। জাতিসংঘের নীতিমালার অনুলিপি ছিঁড়ে ফেলেন এবং নিরাপত্তা পরিষদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে তুলনা করেন। একইসঙ্গে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসনের ক্ষতিপূরণ হিসেবে আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলোর জন্য ৭ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। আফ্রিকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০১০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন গাদ্দাফি।
২০১০ সালে সম্পর্কোন্নয়নের উদ্দেশে ইতালি সফর করেন। কিন্তু সফরের সময় প্রায় ২শ ইতালীয় নারীকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানালে গাদ্দাফির মূল উদ্দেশ্য ঢাকা পড়ে যায়। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাদ্দাফির শাসনের বিরুদ্ধে লিবিয়ায় গণআন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু ওই গণআন্দোলনকে তেমন আমলে না দিয়ে কঠোরহস্তে দমনের চেষ্টা চালান গাদ্দাফি। পরে এ গণআন্দোলন গণবিদ্রোহে রূপ নেয়।
–
লেখক ও গবেষকঃ মুহম্মদ আলতাফ হোসেন এফএনএস’র সাবেক প্রধান সম্পাদক, কেন্দ্রীয় সভাপতিঃ জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা।
ই-মেইলঃ jss82bangla@gmail.com