সমতল অনুসন্ধানঃ কয়েক বছর আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালি থানার ছাদিপুর ইউনিয়নের ভোমরার মোর এলাকার মৃত সোলেমান মণ্ডলের ছেলে মোঃ আব্দুর জব্বার মন্ডল নামের এক ব্যক্তি নিজের চাচা জামাল মন্ডল সহ অন্যান্য আত্মীয়দের সাথে দাঙ্গা-ফ্যাসাদ করে এবং চাচা জামাল মন্ডলের নামে মামলা দায়ের করে। জামাল মণ্ডল উক্ত এলাকার সুধিজন, মুরুব্বি ও বিচার শালীস করে থাকেন। জব্বার মন্ডলের আচরনে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হলে সে পাবনা সদর থানার দোগাছি ইউনিয়নের চর কোশাখালী (লঞ্চ ঘাট) এলাকায় আত্মীয় রিক্সা চালক মোঃ আব্দুর রহমান চেনির বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করতে থাকে।
কিছুদিন পর সে চেনির ঘর সংলগ্ন জমি ক্রয় করে বাড়ি করে এবং জায়গার পরিমান ও দখল নিয়ে নিজ স্ত্রীর বড় ভাই সহ বিপদে আশ্রয়দাতা রিক্সা চালক চেনির সাথে দাঙ্গা ফ্যাসাদে জরিয়ে পরে। জব্বার মন্ডল একবার মেরে চেনির হাতও ভেঙ্গে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ১৩ই মার্চ ২০২৩ তারিখ রাত ৯টার দিকে জব্বার মন্ডলের ঘর আগুন লেগে পুরে যায় এবং সে ২২ই মার্চ ২০২৩ তারিখে পাবনার সদর থানায় নিজে বাদী হয়ে চেনি সহ ৭ জন ও অজ্ঞাত নামা ২/৩ জনের নামে মামলা দায়ের করে। মামলা নং-৪৫।
কিন্তু মামলার এজাহারে উল্লেখিত অভিযোগের সাথে ঘটনার সময় বাড়িতে থাকা মামলার বাদী জব্বার মন্ডলের স্ত্রীর বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়নি।
সাক্ষাৎকারঃ জব্বার মন্ডলের স্ত্রী মোছাঃ আরজিনা খাতুনঃ
এলাকা বাসীর বক্তব্যে জানা যায় ঘটনার সময় চেনি তাদের সাথে ছিলো। সাক্ষতাকার দাতাঃ সিদ্দিক, আক্তার হোসেন, নজরুল ইসলাম, মোঃ আলম।
সাক্ষাৎকারঃ এলাকাবাসীঃ
আগুন ধরার আগেই নিজের বাড়ি নিজেই কুপিয়েছে মামলার বাদী জব্বার মন্ডল; জানালেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী।
সাক্ষাৎকার প্রত্যক্ষদর্শীঃ মোঃ রাজেমঃ
জব্বার মিথ্যা মামলা দিয়ে জালাচ্ছে আমাদেরঃ জব্বার মন্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেন তার স্ত্রীর বড় ভাই মোঃ হাসেম প্রাং।
সাক্ষাৎকারঃ জব্বার মন্ডলের স্ত্রীর বড় ভাই মোঃ হাসেম প্রাংঃ
পাবনার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নিভিয়ে ছিলো জব্বার মন্ডলের বাড়ির আগুন। সে সময় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোঃ জাকির হোসেন।
জব্বার মন্ডলের বাড়িতে আগুন কিভাবে ধরেছিল- এব্যাপারে নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে মন্তব্য করলেন তিনি।
সাক্ষাৎকারঃমোঃ জাকির হোসেনঃ
আলোচ্য মামলার তদন্ত অফিসার এস.আই. মোঃ আরিফুল ইসলাম জানান তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
মিথ্যা মামলা করা কিংবা মিথ্যা সংবাদ নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিভ্রান্ত করা কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা এক প্রকার ফৌজদারি অপরাধ। তবে বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি হবে না, তার সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার আদালত বা ম্যাজিষ্ট্রেটের।
সাক্ষাৎকারঃ এডভোকেট বেলায়েত আলী বিল্লুঃ
বছরের পর বছর ধরে চলা এই ঝামেলা ঈদের পরে মীমাংসা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন দোগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আলী হাসান।
সাক্ষাৎকারঃ জব্বার মন্ডলের ছেলে শিমুল ও চেনিঃ
কোন রাষ্ট্রের ফৌজদারি অপরাধ হল মূলত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই কৃত অপরাধ। সামান্য কিছু ব্যতীক্রম ছাড়া ফৌজদারি মামলার বাদী রাষ্ট্রই। এজাহারে রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের কোন কর্মচারী বাদী না হলেও ফৌজদারি মামলার পক্ষ হল রাষ্ট্রই। রাষ্ট্রের পক্ষ্যে কোন বাদী আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে থাকে। ফৌজদারি মামলায় সরকার একটি পক্ষ ও আসামীরা অন্য একটি পক্ষের হয়ে থাকে। উচ্চতর আদালতে ফৌজদারি মামলার নামকরণও এমনই হয়ে থাকে।
এক শ্রেণির মানুষের মিথ্যা মামলা করা কিংবা মিথ্যা সংবাদ নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিভ্রান্ত করা কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা এক প্রকার ফৌজদারি অপরাধ। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের সুবিচার দেয়ার পাশাপাশি মিথ্যা মামলা বা হয়রানি থেকে বাঁচাবার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের ১৮৬১ সালের দণ্ড বিধিতে পুলিশ বা রাষ্ট্রযন্ত্রকে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া ও মিথ্যা মামলা দায়েরের বিরুদ্ধে শাস্তির ধারা রয়েছে।
১৮২ ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে (সরকারি কর্মচারী) মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিভ্রান্ত করে কিংবা কোন সরকারি কর্মচারিকে দিয়ে কারো ক্ষতি বা বিরক্তি উৎপাদন করে, তাহলে সে ব্যক্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড বা এক হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড কিংবা উভয় বিধ দে- দণ্ডিত হবেন । ১৮২ ধারার কার্যক্রম পুলিশকে মিথ্যা খবর প্রদান, তার ফলে পুলিশে কিছু কার্যক্রম গ্রহণ এবং তার পর যদি সে খবর মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয় তা হলেই প্রযোজ্য হবে। এ ক্ষেত্রে কার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু না করেও শুধু মিথ্যা খবর পরিবেশন করে পুলিশকে কোন কর্তব্য পালন করা বা করা থেকে বিরত থাকা কিংবা কোন ব্যক্তিকে হয়রানি করা হলেই অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে।
অন্যদিকে, দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুসারে কোন ব্যক্তি যদি কারো বিরুদ্ধে, মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মামলা রুজু করান আর সে মামলা যদি তদন্তে বা বিচারে মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে সেই ব্যক্তি অপরাধটি সংঘটিত করেছেন বলে ধরে নেয়া হবে। এক্ষেত্রে যদি অভিযোগটি সাধারণ প্রকৃতির হয় তবে বাদীর দুই বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম জেল ও জরিমানা কিংবা উভয়বিধ সাজা হতে পারে। কিন্তু যে মিথ্যা অপরাধে তাকে হয়রানি করা হয়েছে তা যদি যাবজ্জীবন কিংবা সাত বছর পর্যন্ত জেলের শাস্তিযোগ্য হয়, তাহলে বাদীর সাত বছর পর্যন্ত জেল কিংবা জরিমানাসহ জেল হতে পারে।
১৮২ ধারা ও ২১১ ধারার মধ্যে পার্থক্য হল, ১৮২ ধারায় মিথ্যা খবর দেয়ার মধ্যে অপরাধটি সীমাবদ্ধ থাকে। অর্থাৎ পুলিশকে মিথ্যা খবর দিলেই অপরাধটি সংঘটিত হয়ে যাবে। কিন্তু ২১১ ধারায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করার পরে তা তদন্তে বা বিচারে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পরেই অপরাধটি এ ধারায় শাস্তিযোগ্য হবে।
আমাদের দণ্ড বিধির ১৮২ ও ২১১ ধারা দুইটি অধর্তব্য। অর্থাৎ ম্যাজিস্ট্রেট এর অনুমতি ছাড়া এ দুই ধারায় মামলা রুজুও হবে না, পুলিশ তা তদন্তও করতে কিংবা আসামী গ্রেফতার করতে পারবে না। ১৮২ ধারার প্রয়োগটি খুবই সীমিত। তবে ২১১ ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণের যথেষ্ঠ নজির রয়েছে।
পুলিশ তদন্তের ঐতিহ্য অনুসারে কোন মামলায় যখন তদন্তকারী কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিথ্যা প্রদান করেন, তখনই বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রসঙ্গটি আসে। এ ক্ষেত্রে মিথ্যা মামলায় বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের কাছে আবেদন করেন। (তবে বিআরবির ২৭৯ প্রবিধির আদেশ অনুসারে এ জন্য একটি পৃথক অভিযোগ আদালতে প্রেরণ করতে হবে)। আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করলে তদন্তকারী কর্মকর্তার ২১১ ধারায় বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন। তবে বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি হবে না, তার সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার আদালত বা ম্যাজিষ্ট্রেটের। এক্ষেত্রে সরকার পক্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ পূর্বক ২১১ ধারার প্রসিকিউশন শুরু করা তথা পুলিশকে অনুসন্ধান পুর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা কামনা করতে পারেন। অধিকন্তু আদালত নিজ উদ্যোগেই পুলিশ প্রতিবেদন ছাড়াই মূল মামলার বাদী তথা মিথ্যা মামলা করার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধ আমলে নিতে পারেন।
মিথ্যা মামলা সম্পর্কে আরও জানতে দেখুন এই আর্টিকেলটিঃ Click Here
This investigation’ll update according to incidents.