সমতল ডেস্কঃ র্যাব-৫, সিপিসি-২, নাটোর এর কাছে মোঃ তরিকুল ইসলাম (২৮) এর অভিযোগেরে ভিত্তিতে
একটি আভিযানিক দল কোম্পানী অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ফরহাদ হোসেন ও কোম্পানী উপ-অধিনায়ক সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ রফিকুল ইসলাম
দ্বয়ের নেতৃত্বে গতকাল ২০ নভেম্বর ২০২২ তারিখে আনুমানিক রাত ৮:৪৫ এ নাটোর জেলার সিংড়া থানাধীন পিপলসন দড়িপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নকল স্বর্নের মূর্তি সহ ৭(সাত) প্রতারক কে গ্রেপ্তার করে।
ঘটনার বিবরনঃ
প্রতারণার শিকার ভূক্তভোগী মোঃ তরিকুল ইসলাম (২৮) র্যাব-৫, সিপিসি-২, নাটোর এর কাছে অভিযোগ করেন যে, অনুমান গত মার্চ ২০২২ মাসে
রাজশাহী জেলার বাঘা থানাধীন শাহদোলা মাজার জিয়ারতের সময় প্রতারক চক্রের এক সদস্যর সাথে পরিচয় ঘটে এবং এ সময় তার
সাথে মোবাইল নম্বর আদান প্রদান হয়। পরবর্তীতে প্রতারক চক্রের সদস্য তরিকুল ইসলাম কে বিভিন্ন সময় ফোন দিয়ে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে
তোলে এবং তাদের বাড়িতে আমন্ত্রন জানায়। তরিকুল ইসলাম অনুমান আগস্ট ২০২২ মাসে আটককৃত আসামীর বাড়িতে দাওয়াত খেতে আসে এবং দাওয়াত শেষে নিজ বাড়িতে চলে যায়।
এর কিছুদিন পর প্রতারক চক্রের এক সদস্য তরিকুল ইসলাম কে ফোন দিয়ে জানায় যে, তার এক আত্মীয় পুকুর খনন করতে গিয়ে একটি স্বর্ণের পুতুল পেয়েছে এবং
ভূক্তভোগীর মোঃ তরিকুল ইসলাম এর কাছে অল্প দামে বিক্রয় করার প্রস্তাব দেয়। আটককৃত প্রতারক মুর্তি বিক্রেতার কথা মত মোঃ তরিকুল ইসলাম সিংড়ার পিপলসন দড়িপাড়া এলাকায় আটককৃত মুর্তি বিক্রেতার
বাড়িতে আসলে আটককৃত ও অন্যান্য আসমীগণের সহায়তায় পুতুলটি মোঃ তরিকুল ইসলাম দেখালে সে অবিশ্বাস করলে পুতুলের
ডান হাতের সামান্য অংশ কেটে দেয় এবং তাকে বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষা করতে বলে। তরিকুল ইসলাম তাদের কথামত সামান্য কাটা অংশ স্বর্ণকারের দোকানে পরীক্ষা করায় এবং তাকে উক্ত কাটা অংশ স্বর্ণ বলে জানায়। এরপর তরিকুল ইসলাম আটককৃত ও পলাতক আসামীদের উপস্থিতিতে ১৭/১০/২০২২ তারিখ দুপুর অনুমান ১২:০০ টায় ২,২০,০০০/- (দুই লক্ষ বিশ হাজার) টাকার বিনিময়ে পুতুলটি ক্রয় করে স্বর্ণকারের দোকানে পরীক্ষা করালে স্বর্ণকার তাকে জানায় যে, এটার মধ্যে স্বর্ণের কোন অস্তিত্ব নাই।
বিষয়টি ভূক্তভোগী তরিকুল ইসলাম উক্ত প্রতারক চক্রের সদস্যকে জানায় এবং প্রদত্ত টাকা ফেরত চায়। প্রতারক মুর্তি বিক্রেতাগন টাকা ফেরত দিতে কালক্ষেপন করতে
থাকে। এমতাবস্থায় অদ্য ২০/১১/২০২২ বিকাল অনুমান ০৪:০০ টায় পুতুল নিয়ে বিক্রেতার কাছে আসে। পুতুল ফেরত
দিয়ে তার দেওয়া ২,২০,০০০/- (দুই লক্ষ বিশ হাজার) টাকা ফেরত চাইলে মুর্তি বিক্রেতাগন একত্রিত হয়ে মুর্তি ক্রেতা তরিকুল ইসলামকে বিভিন্ন প্রকার
ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ মেরে ফেলার হুমকি দিলে তরিকুল ইসলাম জীবন রক্ষার্থে সেখান থেকে পালিয়ে জামতলা বাজারে এসে র্যাবের টহল দলকে দেখতে পেয়ে বিষয়টি বিস্তারিত জানালে র্যাবের একটি আভিযানিক দল রাত ৮:৪৫ এ সিংড়া থানাধীন ডাহিয়া ইউনিয়নস্থ পিপলসন দড়িপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নকল স্বর্ণের মূর্তি বিক্রির সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ০৭ (সাত) জন সদস্যকে
গ্রেফতার ও নকল মূর্তিটি উদ্ধার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীগণঃ
১। মোঃ মন্টু (৪০), পিতা-মৃত ফয়েজ উদ্দিন প্রমানিক,
২। মোঃ মুকুল (৪৪), পিতা-মৃত ফয়েজ উদ্দিন প্রামানিক,
৩। মোঃ শফিকুল (৩০), পিতা-মৃত ফয়েজ উদ্দিন প্রামানিক,
৪। মোহাম্মদ আলী (৪০), পিতা-মৃত আজাহার আলী (২২),
৫। মোঃ জাহিদুল ইসলাম (৫৫) পিতা-মৃত সেকেন্দার প্রামানিক,
৬। মোঃ রজিম আহম্মেদ(২২), পিতা মৃতঃ ছহির উদ্দিন সর্ব সাং-পিপলসন (দড়িপাড়া), থানা-সিংড়া, জেলা-নাটোর,
৭। মোঃ আনোয়ার হোসেন (৩৮), পিতা-মৃত আবু বক্কর, সাং-লাঙ্গল মোড়া, থানা-শেরপুর, জেলা বগুড়া।
উদ্ধার কৃত মালামালঃ (ক) নকল স্বর্নের মূর্তি-০১ টি (খ) মোবাইল-০৯ টি, (গ) সীম-১১ টি।
উল্লেখ্য অভিযানের সময় প্রতাকর চক্রের ০৪ জন সদস্য কৌশলে পালিয়ে যায়।
র্যাব-৫, সিপিসি-২, নাটোর এর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত আসামীরা সাক্ষীদের সামনে স্বীকার করে যে তারা সকলেই একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য, তারা পলাতক ও আটককৃত আসামীগন পরস্পর যোগসাজশে দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজনকে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সোনালী রংয়ের পুতুলকে স্বর্নের পুতুল বলে বিশ্বাস করিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
অভিযোগকারী মোঃ তরিকুল ইসলাম (২৮) এর পিতা-মোঃ মহসীন আলী, বাড়িঃ নাটোরের লালপুর থানার আড়বাব ইউনিয়নের সালামপুর গ্রামে।
পরবর্তীতে প্রতারনার স্বীকার মোঃ তরিকুল ইসলাম বাদী হয়ে নাটোর জেলার সিংড়া থানায় গ্রেফতারকৃত আসামীগণের বিরুদ্ধে প্রতারনা মামলা দায়ের করেন।